ব্রেকিং নিউজঃ |
নব আলো : আজ পবিত্র শবে মেরাজ । ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে ২৬ রজব রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে বিশেষ বাহনে করে ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। সেখানে হজরত আদম (আ.)সহ উল্লেখযোগ্য নবীদের সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সালাম বিনিময় হয়। তারপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় উপনীত হন।
তবে শবে মেরাজ সম্পর্কে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের নানা অভিমত রয়েছে। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে শবে মেরাজের সঠিক তারিখ কুরআর-হাদীসে উল্লেখ নেই। ঘটা করে এই দিনে শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করাও বিদআত।
এ পর্যন্ত হযরত জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গী ছিলেন। সেখান থেকে তিনি একা রফরফ নামক বিশেষ বাহনে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর পাঁচওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে ফিরে আসেন পৃথিবীতে।
একই সময়ে মহানবী (সা.) সৃষ্টি জগতের সবকিছুর রহস্য অবলোকন করেন।
আরবি ভাষায় মিরাজ অর্থ হচ্ছে সিঁড়ি। আর ফার্সি ভাষায় এর অর্থ ঊর্ধ্ব জগতে আরোহণ। মিরাজ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা বনিইসরাইলে বলা হয়েছে (আয়াত ১) : তিনি পরম পবিত্র ও মহিমাময়, যিনি রাতে স্বীয় বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। যার চারদিকে আমি বরকতমন্ডিত করেছি। যেন আমি আমার কিছু নিদর্শন দেখাই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে বুধবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে মিরাজ উদযাপিত হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ বাদ আসর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে লাইলাতুল মিরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক এক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম মিরাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে আলোচনা করবেন। এ দিকে সারা দেশের মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এ রাতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে
আলোচনা হবে।
শবে মেরাজের সঠিক তারিখ কুরআর-হাদীসে উল্লেখ নেই
আসুনে এবার সংক্ষেপে দেখি রাসুল (সঃ) কি ভাবে মেরাজে গেলেন - মেরাজ সঠিক কবে হইছে সে সম্পর্কে সঠিক কোন তারিখ উল্লেখ নেই । তবে কিছু কিছু মতে নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস; ২৭ রজব (৬২০ খ্রিটাব্দ) তারিখে মেরাজ অনুষ্ঠিত হয় বলা হইছে । যদিও এটা আনুমানিক বলা । হযরত মালেক ইবনে ছা'ছাআ বলেন- রাসুল (সঃ) বলেছেন -কা’বা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপণীত হইলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শায়িত ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক (জিব্রাঈল ফেরেশতা) আমার নিকট আসিলেন (এবং আমাকে নিকটবতী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়া আসিলেন) ।
অত:পর আমার বক্ষে ঊধর্ব র্সীমা হইতে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত চিরিয়া ফেলিলেন এবং আমার হৃদয় বা কল্বটাকে বাহির করিলেন। অত:পর একটি স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হইল, যাহা ঈমান(পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞান বর্ধক) বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল । আমার কল্বটাকে (জমজমের পানিতে) ধৌত করিয়া তাহার ভিতরে ঐ বস্তু ভরিয়া দেওয়া হইল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রাখিয়া আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করিয়া দেওয়া হইল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হইতে একটু ছোট, গাধা হইতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হইল তাহার নাম “বোরাক”, যাহার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে সওয়ার করা হল । এরপরে রাসুল (সঃ) কে প্রথমে মসজিদুল আল'আকসায় নিয়ে যাওয়া হয় , এবং আল্লাহর কুদুরতে সেখানে পূর্বে থেকেই সকল নবী রাসুল গনকে হাজির করা হয় সালাত আদায়ের জন্য । রাসুল (সঃ) সেখানে সালাতের ইমামতি করান । এরপর তাকে নিয়ে ঊর্ধ্বে গমন করা হয় । ৭ আসমানে যার যার সাথে রাসুল (সঃ) দেখা হয় -
প্রথম আসমানে আদম (আঃ) - দ্বিতীয় আসমানে -ইয়াহইয়া এবং ঈসা (আঃ) - তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আঃ) - চতুর্থ আসমানে ইদ্রিস (আঃ) - পঞ্চম আসমানে হারুন (আঃ) - ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আঃ) - সপ্তম
আসমানে ইব্রাহীম (আঃ) । এরপর রাসুল (সঃ) কে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় । এরপর জান্নাত,জাহান্নাম পরিভ্রমন করেন এবং এরপর
৫০ ওয়াক্ত নামাজ দেয়া হয় আমাদের জন্য । [বুখারি - হাদিস নং - ৩৬০৩]
- ( প্রিয় বন্ধুরা , আপনারা অনেকেই জানেন কিভাবে রাসুল (সঃ) , মুসা (আঃ)এর কথায় নামাজ কমিয়ে আনে । তাই আর বিষদ বর্ণনা করলাম না , আর এই হাদিসটা অনেক বড় বিধায় গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু তুলে ধরা হলো )
রাসুল (সঃ) কি সত্যি আল্লাহকে দেখছেন , এমনপ্রশ্ন অনেকের মনে আসতে পারে - এক হাদিসে আছে - রাসুল (সঃ) বলছেন - ৩ টা কথা যে বলবে সে মিথ্যাবাদী - ১) যে লোক বলবে যে 'মোহাম্মদ (সঃ) তার রবকে দেখেছে । ২) যে লোক বলে যে ' আগামীকাল কি হবে তা সে জানে । ৩) যে লোক বলবে 'মোহাম্মদ (সঃ) কোন কিছু গোপন করেছে । (বুখারি - হাদিস নং - ৪৪৯১ ) এই হাদিস থেকে বুঝা যায় রাসুল (সঃ) আল্লাহ পাক কে সরাসরি দেখেননি । মেরাজ সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারনা থাকে যে , এই রাত হয়তো ফজিল পূর্ণ রাত ।
এই রাতে আল্লাহ প্রথম আসমানে আসেন এবং বান্দার দোয়া কবুল করেন । কোরআন অথবা হাদিসে এই সম্পর্কে স্পষ্ট কোন কিছু বলা নেই । যেসব হাদিস পাওয়া যায় সেগুলো ইসলামি চিন্তাবিদ গন জাল বলে ঘোষণা করছেন । তাই এই রাতে বিশেষ ফজিলতের আশায় নামাজ পড়া মানে রাসুল (সঃ) এর দেখানো পথের চেয়ে ২/৪ লাইন বেশী বুঝা । আপনি সাধারন ভাবে যদি রাত জেগে নামাজ পড়েন (তাহাজ্জুদ) সেটা এই রাতেও পড়তে পারবেন । এছাড়া বিশেষ কোন জিকির , নামাজ , কবর জিয়ারত , রোজা রাখা ইত্যাদি মেরাজ উপলক্ষে করাই ভুল ।
শবে মেরাজে বিশেষ আয়োজন করা বিদআত
রজবের ২৭ তারিখ রজনীতে বিশেষ কোনো আয়োজন করা বিদআত। তবে সাধারণত: প্রত্যেক রাতে যেসব ইবাদত করা হয়, শবে মেরাজের রাতে সেসব ইবাদত করাতে কোনো বাধা নেই। অর্থাৎ গতরাতে যেভাবে জেগে ইবাদত করেছিলেন আজ শবে মেরাজের রাতেও সেভাবে করুন। এতে কোনো প্রকার পার্থক্য বুঝা যায়না।
২৭ রজবে রোযা রাখার কোনো দলিল নেই
এ দিনটিতে রোযা রাখাকে কেউ কেউ আশুরা ও আরাফার দিনের রোযার ন্যায় ফযিলত সম্পন্ন মনে করে থাকেন। মূলত: এ তারিখে রোযার স্বপক্ষে দুয়েকটি দুর্বল রেওয়ায়ত ব্যতিত কোনো বিশুদ্ধ সনদের সাথে এর পক্ষে কোনো দলিল নেই।
হযরত ফারুক্বে আযম চিরতরে বন্ধ করলেন বিদআতের এ পন্থা
২য় খলিফা হযরত ওমর রা. এর খেলাফতকালে কেউ কেউ এ তারিখে রোযা রাখা শুরু করল। রোযা রাখার সংবাদ যখনই খলিফা জানতে পারলেন ঠিক তখনই তিনি বের হয়ে তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা সবাই আমার সামনে খানা খাও এবং প্রমাণ করে দাও যে তোমাদের রোযা নাই’। তিনি সামনে থেকে তাদেরকে খানা পরিবেশন করালেন এজন্য যে, তাদের অন্তরে এ বিশ্বাস জন্মে যে, আজকের রোযা ও নফল রোযার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ দিনটিতে রোযা রাখার আলাদা ফযিলত মনে করে রাখলে তা হবে বিদআতের পর্যায়ভুক্ত। হযরত ওমর রা. এ পদক্ষেপটি এ জন্য নেন যাতে বিদআতের এ পথটি চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং নিজের পক্ষ থেকে কোনো প্রকারের সীমাতিরিক্ত কাজ না হয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, হাল যামানার মুসলমানরা ফরয রোযার মতই এ দিনটির রোযাকে গুরুত্ব সহকারে রাখে। আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সহিহ সমুঝ দান করুন।
উক্ত রাতে জেগে থেকে কি পাপ করেছি
আমাদের সমাজে ইসলামপ্রিয় অনেক লোক এমনও আছেন যারা উপরোক্ত বিষয় উপলব্ধি করার পরও বলেন যে, আমরা শবে মেরাজে ইবাদত করে ও রোযা রেখে কি পাপ করেছি? আমরা মদ পান করেছি নাকি ডাকাতি করেছি? আমরা তো এ রাতে ইবাদতই করেছি। হযরত ফারুক্বে আযমের কাজ দ্বারা এ সকল ব্যক্তিদের এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, ‘‘মেরাজের রাতে বিশেষভাবে ইবাদত করা ও দিনে রোযা রাখায় এ পাপ হয়েছে যে, আল্লাহ পাক সেদিন কোনো বিশেষ রোযা রাখার নির্দেশ দেননি। আর শবে মেরাজ উদযাপন করতেও বলেননি। (আর-রশিদ)
আল্লাহর হুকুম পালনই পুরো দ্বীনের সারাংশ
পুরো দ্বীনের সারাংশ মহান আল্লাহ তাআলার পবিত্র এ বাণী-‘তোমরা আল্লাহর হুকুম মানো’। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যখন যে ইবাদতের হুকুম করেছেন, তখন তা আদায় করাই হল আল্লাহর হুকুম পালন করা। আল্লাহ তাআলা যদি দয়া ও অনুগ্রহ করে এ বাস্তবতাকে আমাদের অন্তরে ঢেলে দেন তখনই এসকল বিদআতের মূলোৎপাটন হওয়া সম্ভব।
মাহে রজব রমজানের ভূমিকা, তাই রমজান আসার আগেই প্রত্যেকে সিয়াম-সাধনার প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। এ জন্যই মহানবী সা. রজব মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এই দুআ করতেন-‘‘আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বান, ওয়া বাল্লিগনা রামাযান’’ অর্থাৎ হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে রজব-শা’বানে বরকত দান করুন। এবং এ বরকত সাথে নিয়ে রমযান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
পরিশেষে, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের সবাইকে যাবতীয় বিদআত থেকে দূরে রাখেন এবং কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিকভাবে ইবাদত করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
সংবাদটি পঠিতঃ ২৫০ বার