ব্রেকিং নিউজঃ |
রাজধানীর কয়েকটি স্থানে মঙ্গলবার বিকেলে বিভিন্ন দাবীতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ কয়েকটি সংগঠন। এরমাঝে বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় যানজট। এত চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বিকাল সাড়ে ৩টার পর বৃষ্টির মধ্যে তাদের অবরোধের ফলে শাহবাগ ও আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। অবরোধের মধ্যে বিকালে শাহবাগ থেকে কাটাবন মোড় পর্যন্ত যানবাহন চলাচল একেবারে থেমে থাকতে দেখা যায়। বৃষ্টির কারণে সড়কে বিপাকে পড়া মানুষেরা যানবাহনের ধীরগতির কারণে আরও ভোগান্তিতে পড়েন।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে নগর ভবনের সামনে ষষ্ঠ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে করা এই আন্দোলনকারীরা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িত প্রকৃত খুনিদের অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। বিকেল ৩টার পর প্রায় দু’ঘণ্টা রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এই এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখে ছাত্রদল। প্রায় একই সময় বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি করেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। এ সময় যমুনা অভিমুখে যাত্রায় পুলিশের বাধার মুখে কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এছাড়া রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ মোড় অবরোধের কারণে মৎস্য ভবন, গুলিস্তান, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, নয়া পল্টন ও বিজয়নগরসহ আশপাশের এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়েছে। কাকরাইলে গার্মেন্টস শ্রমিকের অবরোধের কারণে মালিবাগ, শান্তিনগর, বেইলিরোড, রমনা এলাকায় সৃষ্টি হয় যানজট। রাজউকের সামনে বিক্ষোভে মতিঝিল এলাকায়ও যানজট দেখা যায়। এরমাঝে বিকেলে রাজধানী ঢাকায় হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গরম থেকে স্বস্তি মিললেও হঠাৎ আসা এ বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েন বাসায় ফেরা কর্মজীবী মানুষজন। অনেকে আবার এ বৃষ্টিতে আনন্দ উপভোগ করছেন। বিকেলে অফিস শেষে অনেকে একসঙ্গে বের হওয়ায় সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। বৃষ্টি শেষে বিকেলে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। সাধারণ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে। এ সময় দীর্ঘক্ষণ সড়কে আটকে থাকতে দেখা যায় গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত যানবাহনও। গণপরিবহনের যাত্রীদের নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে দেখা যায়।
বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে বৃষ্টির ফলে মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে শুরু করে কালশী পর্যন্ত অনেক জায়গায় রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে যান চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক যাত্রী রিকশা ও বাস না পেয়ে ভিজেই রওনা হন বাসার উদ্দেশে। রাজধানীর ধানমন্ডিতেও একই চিত্র। ধানমন্ডি-২৭ নম্বর সড়ক ও সাত মসজিদ রোডে বৃষ্টির পানিতে রাস্তায় বসে পানি জমে যায়। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে চাকরি করেন নিজাম। তিনি বলেন, ‘অফিস শেষ হয়েছে ৫টায়। সবকিছু গুছিয়ে বসে আছি বাসায় ফেরার আশায়।’ সাভার পরিবহনের হেলপার বলেন, সদরঘাট থেকে দুই ঘণ্টা হলো রওনা দিয়েছি। মৎস্য ভবন মোড় এখনো অনেক দূর। অথচ প্রেসক্লাব এলাকা পার হতে পারিনি। আরেকটি বাসের চালক জানান, হাইকোর্ট ফোয়ারার মোড়ে আটকে আছি। সামনে যেন গাড়ি চলছেই না। থমকে গেছে সড়কে চলাচল। খবর নিয়ে জানলাম শাহবাগ ও কাকরাইলে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।
মিরপুর ১০ মেট্রোরেলের পাশে রিকশা রেখে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় আছেন রিকশাচালক মজিদ। তিনি বলেন, সকাল থেকে দেখছি আকাশে একবার মেঘ, একবার বৃষ্টি। এ রকম পরিস্থিতিতে রিকশা নিয়ে বের হতে হতে দুপুরের পার হলো। এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাস্তায় পানি। ভাড়াও ঠিক মতো পাইনি। তাই দুশ্চিন্তা নিয়ে এখানে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায়। এদিকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে অনেকে। তারা বলছেন, এমন বৃষ্টিতে যদি ভিজতে না পারি তাহলো জীবনটা উপভোগ করা হবে না।
এদিকে বিকালেই সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এসেছে রাজধানীতে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বিকালে আকাশ অন্ধকার করে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে প্রায় ঢাকাজুড়েই। গতকাল ভোর থেকে রাজধানীর আকাশ পরিষ্কার থাকলেও বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তেজ কমে আসতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ আকাশ কালো হয়ে আসে। এরপর বেলা পৌনে দুইটা নাগাদ মতিঝিল, পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, টিকাটুলি, গোপীবাগসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। তবে বৃষ্টি ছিল হালকা ধরনের। বিকালের মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে পূর্বাভাস দেয় আবহাওয়া অধিদফতর। এরপর বিকালে আবহাওয়া হয় ঠিক তেমনই। ঘন কালো মেঘে ঢেকে গেছে ঢাকা। রাস্তার গাড়িগুলোর প্রায় সব হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাতে বাধ্য হচ্ছে।
বৃষ্টির সময় অফিস থেকে বের হলে যানবাহনের সংকট দেখা দেয় এমনিতেই। এরপর ভাড়ার মাত্রাও বাড়িয়ে দেয় রিকশাওয়ালা, সিএনজিওয়ালারা। ভোগান্তি তখন চরম আকার নেয়। আবহাওয়া অফিস জানায়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।