সিনিয়র রিপোর্টার, নব আলো
প্রকাশিতঃ ৩১ মার্চ ২০১৯ ০৯:৩২:৪১ পূর্বাহ্ন
১৮ তলা ভবনটিকে ২৩ তলা করা হয় যেভাবে, দুই মালিক গ্রেফতার

নব আলো : রাজধানীর বনানীতে বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জমির মালিক এসএমএইচ আই ফারুক (৬৫) এবং ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার রাতে তাসভিরের বারিধারার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেফতার হন জমির মালিক ফারুক।

তাসভিরের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিবি (উত্তর) পুলিশের এডিসি সাজাহান সাজু এবং এডিসি গোলাম সাকলাইন সিথিল ফারুকের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ঘটনায় মামলার অন্য আসামী এখনো গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ বলছে, তিনি দেশে আছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। 

এরআগে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার রাতে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মিল্টন দত্ত বাদী হয়ে ৪৩৬/৩০৪(ক)/৪২৭/১০৯ ধারায় মামলা (নম্বর ৩৭) করেন। এতে এসএমএইচ আই ফারুক, রুপায়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান ও তাসভির উল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

তাসভির উল ইসলাম কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। পাশাপাশি তিনি কাশেম ড্রাইসেলস কোম্পানি লিমিডেট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা।

যেভাবে ভবনের বর্ধিত অংশের মালিক হলেন তাসভির

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাসভির উল ইসলাম ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে তাসভির ওই ১৮ তলা ভবনটিকে ২৩ তলায় উন্নীত করেন।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভবনটির ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। তখন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়। ডেভেলপার কোম্পানি ভবনটির ২০ ও ২১তম তলাটি জাতীয় পার্টির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে। মাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ফ্লোর দুটি কিনে নেন কাশেম ড্রাইসেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএনপি নেতা তাসভির উল ইসলাম। এরপর তিনি নকশা পরিবর্তন করে ছাদের ওপর আরও দুটি ফ্লোর নির্মাণ করেন।

এদিকে অনলাইন গণমাধ্যমের কাছে শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে তাসভির দাবি করেন, “তার ফ্লোরগুলোর রাজউক অনুমোদিত বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তিনি ফ্লোরগুলো রূপায়ন থেকে কিনেছেন। ভূমি মালিক আর ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্বের কারণে এই ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তিনি দায়ী নন, দায়ী রাজউক।”

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে ২৩ তলা বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট আগুন নেভানো ও হতাহতদের উদ্ধারের কাজ করে। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব, রেড ক্রিসেন্টসহ ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত অনেক স্বেচ্ছাসেবী অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ৭টায় আগুন নেভানো সম্ভব হয়। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছেন। 


জানা গেছে, তাসভির উল ইসলাম কাশেম ড্রাইসেলস কোম্পানি লিমিডেট নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে ভবনটির ভূমি মালিক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক ও রূপায়ন গ্রুপ যৌথভাবে নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করে।

সে সময় রাজউক ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়। পরে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর ভবনটিকে ২৩ তলা পর্যন্ত বর্ধিত করে নির্মাণ করা হয়।

ডেভেলপার কোম্পানি ভবনটির ২০ ও ২১তম তলাটি প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য মাইদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করে।

তার কাছ থেকে ফ্লোর দু’টি কিনে নেন তাসবিরুল ইসলাম। এরপর তিনি নকশা পরিবর্তন করে ছাদের ওপর আরও দুটি ফ্লোর নির্মাণ করেন।

গত বৃহস্পতিবার বনানীর এফআর বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ২৫ জন নিহত হন। আহত অবস্থায় অর্ধ শতাধিক জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহতদের মধ্যে আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামের একজনের শনিবার (৩০ মার্চ) হাসপাতালে মৃত্যু হলে এ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ জনে দাঁড়াল।

বৃহস্পতিবারের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জাতি বিভৎসতা ও না মেনে নেয়ার মতো ঘটনার সাক্ষী হয়েছে।

সেদিন বাঁচার আকুতি নিয়ে দমকল বাহিনীর মইতে উঠতে না পেরে সুউচ্চ ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোর থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা গেছে মানুষদের। জানা গেছে, সুউচ্চ এফআর টাওয়ারে ২৫টির মতো বিভিন্ন অফিস ছিল। গড়ে প্রতি অফিসে ১০০ জন করে কর্মজীবী থাকলেও সে সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৫০০। সিঁড়ির ব্যাসার্ধ ছিল ৩৬ ইঞ্চি। ভূমিকম্প কিংবা আগুন লাগলে মাত্র ৩৬ ইঞ্চি চওড়া সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে কীভাবে এত মানুষ জরুরি ভিত্তিতে নামবে, সে প্রশ্ন সামনে চলে আসে।

ভবন কর্তৃপক্ষ যে এ ব্যাপারে উদাসীন ছিল সে বিষয়টি সন্দেহাতীত প্রমাণিত। আবার এ ভবনে যারা অফিস নিয়ে কার্যক্রম চালিয়েছেন, তারাও নিরাপত্তার বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার অবকাশ পাননি।

তবে ভবন মালিকই যে এ ক্ষেত্রে সর্বেসর্বা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার কথাই চূড়ান্ত। বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় একটি অফিস পাওয়াও অনেকে সৌভাগ্য মনে করেন।


 


প্রকাশকঃ- মোঃ সাইদুল ইসলাম রেজা

মিরপুর ১০ ,ঢাকা-১২১৬, ইমেইলঃ news.muktobani@gmail.com টেকনিকালঃ 01511 100004, নিউজ রুমঃ 01552 601805