প্রকাশিতঃ ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ০৮:১১:১৭ পূর্বাহ্ন
খাগড়াছড়িতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি॥ খাগড়াছড়ির বিভিন স্থানে বালুখেকোরা সরকারি ইজারাবিহীন বালুমহল থেকে দেদারছে বালু উত্তোলন করছে। বালুখেকোদের সহজ যুক্তি ‘উন্নয়ন কাজ’এর জন্য বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। জেলায় সরকারিভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ৯টি মহাল ঘোষণা করা হলেও উত্তোলন হচ্ছে শতাধিক স্থানে।

জেলার খাগড়াছড়ি সদর,মানিকছড়ি,দীঘিনালা,মাটিরাঙ্গা বিভিন্ন পাহাড়ি নদী ও খাল থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আতংকে সাধারণ মানুষ। খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বালুখেকোদের উৎপাত সবচেয়ে বেশী। সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন শ্রমিক খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে। পাশের কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বালু উত্তোলনের কারনে প্রতি বর্ষা মৌসুমে তাদের ভূমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনে বাধা দিলে হুমকি দেওয়া হয়। তিনট্যহরী চেংগুছড়া রাস্তায় দেখা গেছে আরো ভয়াবহ চিত্র। এ সড়কের বিভিন্নস্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছে শ্রমিকরা। কিন্তু নেপথ্য ব্যক্তির নাম বলতে রাজি নয় তারা। এসময় ছবি তুলতে গেলে বালু উত্তোলনকারী পরিচয়ে মো.বেলাল নামে এক ব্যক্তি বাধা দিতে আসে। অতিরিক্ত বালু ভর্তি ট্রাকের ভারে এ গ্রামীণ সড়কটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। আবার কোথাও সড়কের কোন অস্থিত্ব নেই।
সড়কে চলাচলকারী ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল মো.মারুফ মিয়া জানান,‘পুরো সড়কটি বালু খেকোরা নষ্ট করে দিয়েছে। দিনে-রাতে এ সড়ক দিয়ে চলে অতিরিক্ত বালু ভর্তি ট্রাক। একই চিত্র মানিকছড়ির বড়বিল, যোগ্যাছলা, পাক্কাটিলার ও তুলাবিল এলাকার। ’

উপজেলার প্রায় শতাধিক স্থান থেকে বালু তুলে নিচ্ছে তারা। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই । প্রকাশ্যে নদী বা খাল থেকে মেশিন বসিয়ে সহসায় বালু তুলছে চক্রটি। চট্টগ্রামের সীমান্তবর্তী অধিকাংশ বালু চট্টগ্রামে যায় । এভাবে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজনের বালু ভর্তি ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে গ্রামীণ সড়কগুলোতেও অকালে ভাঙন ধরছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বৈধ
বালুমহাল ইজারাদাররা ক্ষতিগস্ত হচ্ছেন।

পরিবেশ কর্মীরা জানান,‘ প্রশাসন সত্যিকার অর্থে তৎপর হলে বালুখেকোরা এতটা বেপেরোয়া হত না। প্রশাসনের খামখেয়ামি এবং গাফিলতির কারণে বালুখেকোর আরো আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। মানিকছড়ির উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন ‘বালুবাহী যান চলাচলের কারণে উপজেলা অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা । বিভিন্ন ভারী যানবাহনের চাপে উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের অল্প দিনের মাথাতেই চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এর সাথে যুক্ত। ’

খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী নদী, খাগড়াছড়ি খাল ও রাঙাপানিছড়া, দীঘিনালা উপজেলার মাইনী নদী, মানিকছড়ি ও পানছড়ি পাশ দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গীসহ বিভিন্ন ছড়া, মানিকছড়ি খাল, চেঙ্গুছড়া ও বড়বিলসহ বিভিন্ন নদী ও খালগুলো।

খাগড়াছড়ির পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা সত্বেও জেলায় অবাধে বালু উত্তোলন, পাহাড়কাটা, পুকুর-জলাধার ভরাটের দৃশ্যত প্রশাসনের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন,‘অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানা হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তৎপর রয়েছে। এছাড়া মানিকছড়ির বর্তমান ইউএনও ছুটিতে থাকায় প্রশাসনিক কাজেও কিছু বিঘ্ন হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স রয়েছে।’


প্রভাতী নিউজ / জি এস


প্রকাশকঃ- মোঃ সাইদুল ইসলাম রেজা

মিরপুর ১০ ,ঢাকা-১২১৬, ইমেইলঃ news.muktobani@gmail.com টেকনিকালঃ 01511 100004, নিউজ রুমঃ 01552 601805